আমিঃ ( শান্ত গলায়) কে?
দরজার ওপাশ থেকে ওয়াজ আসলোঃ আমি তোমার আম্মাজান,,, দরজাটা খোলেন। ( খাইছেরে আম্মু এই সময়ে কেন আসলো
আমাদের জগড়া ঝাটি শোনে ফেললো নাতো! আমি মুহুর্তের মধ্যেই এক বালতী দুশ্চিন্তা লইয়া রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি,,, মাইয়া এক্কেবারে অবুজ বালিকার মতো ইইইইইইয়্য্যা বড়ো একখান ঘোমটা দিয়া বউ সাইজ্জা বইসা আছে
)


আমি দরজা খোলা মাত্রই আম্মু রুমে ঢুকেঃ কি বেপার! এতো চেচামেচি করছিলি কেন?
আমিঃ ( এক্কেবারে সাধু সাইজ্জা) আম্মু চেচামেচি মানে
কি বলতেছ এসব!

আম্মুঃ অইই এতো নেকা সাজা লাগবেনা,,, বল কি করছিস?
আমিঃ ( আম্মুর কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে) আম্মুউউ,, নতুন বউয়ের সামনে কি সব আবোল তাবোল বলতেছো! বাসর রাতে কেউ চেচামেচি করে! আম্মু আমি নিশ্চিত তুমি আজকে প্রেসারের ঔষধ খাও নাই,,! বয়স হইছে তো, তাই এমন ভুলভাল শোনতেছো 

আম্মুঃ (এক্কেবারে মক্কেল সাইজ্জা) হ বাজান আমি হয়তো ভুল শুনেছি। আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
তারপর আম্মু রুম থেকে যেতেই দরজা লাগিয়ে যেই রিয়ার দিকে তাকালাম,, দেখি মাইয়া এক্কেবারে পুরো খাট দখল কইরা ঘুমের রাজ্যে আরুহন করিতেছে,,আয়ায়ায়াহহ কি মায়াবী চেহারা গো,, এই চেহারাটার দিকে তাকিয়ে নিমিষেই একটা জনম পাড় করে দেওয়া যায়,,, আমি ওর কাছে গিয়ে ডাক দিলাম
আমিঃ বউউউউউউ
,,, বউউউউউউউউগো

রিয়াঃ (চোখ খোলে) কি হইছে? এতো রস লাগিয়ে বউউউউউ বইলা চিল্লাইতেছ কেন?
আমিঃ না মানে আমি ঘুমাব।
রিয়াঃ তো ঘুমাও।
আমিঃ না মানে তুমিতো পুরো খাট দখল করে আছ,,,কই ঘোমামু

রিয়াঃ বাবুইইই
আমিঃ ( মুহুর্তের মধ্যেই ফট কইরা এক্কেবারে ওর কাছে গিয়া) বলোনাগো সোনা আমার

রিয়াঃ তুমি চুপচাপ এখন ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে যাও,,, কেমন
নয়তো কপালে অনেক দুঃখ আছে।

আমিঃ (এক্কেবারে কবি কবি ভাব লইয়া) ওগো তুমি যখন ছিলে গভীর ঘুমে 

তখনই তোমাকে দেখিয়া আমি হাদারাম পরিয়াছি প্রেমে
। শোননা,, বলছিলাম যে আমরা আগের সব কিছু ভুলে গেলে হয়না
চলনা দুজন আবার নতুন করে শুরু করি এক রোমান্টিক প্রেমের ইতিহাস
।



রিয়াঃ ওওইইই,, তোর এসব ঢপ বাজি পকেটে রাখ। একটু আগে আমাকে কি বলছিস,, আমি কিচ্ছু ভুলি নাই।
আমিঃ অলে আমাল লক্ষিটা,, ওইগুলা তো রাগ করে বলছি।
রিয়াঃ এএএএএএএ আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি। কি যেনো বলছিলি,, আমি শয়তানের নানি,, তারপর আমি তোর জীবন ত্যান ত্যান করে ফেলছি,,, তো এখন আমার কাছে কি!
আমিঃ বলছিলাম কি
ইয়ে মানে আমাকে এই বারের মত মাফ করে দেওয়া যায় না?

রিয়াঃ ওও হ্যালো,, তোকে আমার হারে হারে চেনা আছে। বজ্জাত ব্যাডা
( নাহ
এখন আর সহ্য করা যাচ্ছেনা,,, আমাকে অপমান করা হচ্ছে,, না না না আমার জন্য এখন আমি আমার পুরো পুরুষ জাতিকে নারীর কাছে ছোট করতে পারি না,,,,

ঝগড়া যখন করেছি,
আরও করবো,,
তবুও আমাদের পুরুষ জাতিকে নারীর কাছে মাথা করতে দেবো না ইনসাল্লাহ,,
ভায়েরা আমার,,
চিল্লায়া কন ঠিক কিনা?)
আমিঃ আসলে একটা কথা কি জানিস! কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না,, তেমনি তোদের মতো কিছু মেয়ে আছে যাদেরকে সম্মান দিলে সেটার মূল্য বুঝে না,,, বরং এটাকে তোরা পুরুষ জাতির দুর্বলতা ভাবিস। দেখ আমি এই খাটেই ঘুমাবো,, তোর ইচ্ছে হলে আমার পাশে ঘুমা,, নয়তো নিচেও ঘুমাতে পারেন

(কথাটা বলার সাথে সাথেই রিয়া ফট কইরা বিছানা থেকে নেমে গিয়ে হাতে ফল কাটার ছুরি টা নিয়ে আমার দিকে এগুতে লাগলো,,, উরিমারে আমার ডর করাতছে
)

আমিঃ ( তুতলাতে তুতলাতে) বা বাও বাবু,, তুত তুমি ফল কাটার ছুরি নিয়ে এইদিকে আসতেছ কেন!
রিয়াঃ ( ছুরিটা আমার গলার কাছে এনে) নাম,, বিছানা থেকে নাম। (আমিও সাথে বেক্কেলের মত বিছানা থেকে নেমে গেলাম) আর জীবনে আমার মুখের উপর কথা বলবি?
আমিঃ না
আমি তোমার সব কথা শোনব,, তুমি যা বলবা আমি তাই করবো,,, আমি জীবনেও খাটে ঘুমামু না,, আমারে ছাইড়া দাও,,,,

ওওওওওয়া,, ওওওওওয়া,,,ওওওওওয়া 

রিয়াঃ ( আমার গলার কাছ থেকে ছুরিটা সরিয়ে) হুম মনে থাকে যেনো,,, mind it 

তারপর রিয়া ছুরিটা ওর বালিশের কাছে রেখে,, নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়লো,, আর আমিও সুযোগ বুইজ্জা ঠাস কইরা ছুরিটা আমার হাতে লইয়া,, এক্কেবারে বাংলা সিনামার ডিপজলের মত হু হু কইরা এক গাট্টি হাইসসা কইলাম,,, তরে আজকা খাইইইছিই,,, সাথে সাথেই রিয়া আর কোনো কথা কইয়াই এক্কেবারে হোসাইন বোল্টের গতিতে খেইচ্চা দৌড়। লে খুকা মাইয়াতো দরজা খুইল্লা বাইরে চইলা গেছে
(ঠোঁটের উপর হাতের আংগুল দিয়া মুখখানা চাইপ্পা ধইরা একখান হাসি দিলাম,, যেনো মুখে মশা ঢুইক্কা না যায়
) হু হু মাইয়া আমারে ডরাইছে,,, ঠিক তখনই আমার ডান কানে একটু ব্যাথা অনুভব করায়,,, যেই কানে হাত দিলাম,,, দেখি আম্মুর হাত।


আমিঃ আম্মু ছাড়,,, লাগছে তো 

আম্মুঃ ( এক বস্তা রাগ মাথায় লইয়া) তুই কি মানুষ হবিনা!
আমিঃ আম্মু তুমি এটা কি বললা! তাইলে আমি কি ভিন দেশি এলিয়েন নাকি?

আম্মুঃ ওরে খোদা,,,, পৃথিবীতে এত মানুষ থাকতে এই আইটেম টাকে আমার কাছেই পাঠাতে হলো
। ওই তুই বউমাকে মেনে নিচ্ছিস না কেন! প্রব্লেম টা কি তোর?

আমিঃ ( এক ডিব্বা রহস্য মাথায় লইয়া) মেনে নিচ্ছি না মানে! তোমার বৌমা ই তো আমাকে মেনে নিচ্ছে না 

রিয়াঃ আম্মু আপনি উনার কথা বিলিভ কইরেন না,,, আমাকে একটু আগে ছুরি দেখিয়ে বলেছে,, আমাকে নাকি উনি মেরে ফেলবে,,,(গুলুগুলু হয়ে) যদি আমি জোর পূর্বক স্ত্রীর অধিকার চাই
। আম্মু দেখেন উনার হাতে এখনও ছুরিটা আছেই।

আম্মুঃ সাদ,, তুই এক্ষনি এই রুম থেকে যা।
আমিঃ যাবো মানে! কই যবো আমি?
আম্মুঃ ( আমাকে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েই দরজা লাগিয়ে দিয়ে) তোর যেখানে খুশি যা।
যা সালা
এখন কি করমু!

তারপর বাধ্য হয়ে আব্বুর রুমে গেলাম
আব্বুঃ ( আমাকে দেখা মাত্রই) তা বাপধন এই বাসর রাতেও কি আকাম করছেন, যে সোজা আমার কাছেই ট্রাসফার হতে হলো?
আমিঃ আব্বুউউহহ
আমারে আম্মু জুর কইরা বাসর থেইক্কা তারাই দিছে। তুমি প্লিজ আম্মুরে একটু বুঝায়া বল।

আব্বুঃ আব্বাজান,, আমি বলিকি,, তুমি চুপচাপ এখন আমার পাশে শুয়ে পড়,,,সকালে যা করার করব।
আমিঃ মানে কি! আজকে আমার বাসর রাত!
আব্বুঃ দেখ বাপধন,,, দেশের ক্ষমতা এখন শেখ হাসিনার হাতে,,, আমরা পুরুষ একটু নির্যাতিত হবোই,, মেনে নে বাপধন, মেনে নে।
শেষমেষ কোনো উপাই না পাইয়া,,
#আম্মু যখন মোর বউ লইয়া,,
আমারে আব্বুর লগে থুইয়া,,
মনে সুখে ঘুমায় যায় 

ফাইট্টা যায়,,
বুকটা ফাইট্টা যায়

এই গানডা গাইতে গাইতে ঘুমায়া গেলাম।
পরের দিন সকালে ঘুম ভাংলো কয়েকটা ষাড়ের চেচামেচিতে,,, চোখ খুলতেই দেখি এই গুলা কোনো জিবন্ত ষাড় নয়,, আমার পড়ানের হারমি বন্ধু অরুফে ভন্ডুগুলা।
আমিঃ কি বেপার! এই সাজ সকালে তোরা আমার বাসায় কোন দুঃখে!