রিয়া আর কিছু না বলেই ছাদ থেকে নিচে চলে যেতে লাগলো। বেচারি নিশ্চয় এখন রুমে গিয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করবে।
তারপর দেখতে দেখতেই আরও ৪ দিন কেটে গেলো,,, আর মাত্র ৫ টা দিন,, তারপরই আমার আর রিয়ার রাস্তা আলাদা। দুজন দুই দিকে। কেউ কাউকে চাইলেই দেখতে পারবো না,,, চাইলেই তার সাথে ঝগড়া করতে পারবো না,,, কেউ আর আমাকে জালাবেও না। আমারও আর কারোর জন্য সময় মত বাসায় ফিরতে হবে না,,, আমরা দুজনেই মুক্ত হয়ে যাবো। কারোর ই কোনো ধরনের প্যারা থাকবে না,, থাকবেনা কারো অভিযোগ। আচ্ছা আমরা দুজন আলাদা হলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? আমারা সত্যিই দুজন দুজনকে ছাড়া হেপি থাকবো! কথাগুলু আমাদের বাসার করিডরে দাড়িয়ে ভাবছি,, ঠিক তখনই কারোর থান্ডা আর সিতল হাতের স্পর্শে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি আম্মু।
আমিঃ (হকচকিয়ে) আম্মু তুমি!
আম্মুঃ হ্যাঁ আমি,, তোরাতো নিজেদের ইচ্ছেতেই আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছিস। আচ্ছা তোরা আলাদা হয়ে গেলেই কি ভালো থাকবি। তোদের সমস্যা টা কি জানিস?
আমিঃ কি?
আম্মুঃ তোদের ইগো,,, এই ইগোটাকে তোরা প্রাদান্য দিতে গিয়ে তোরা নিজেরাই হেরে যাচ্ছিস,, আর জিতে যাচ্ছে ইগো। একটু ভেবে দেখিস,, আর রিয়া এই পর্যন্ত যা যা করেছে আমি সব কিছুই জানি।
আমিঃ মানে! তুমি কি জানো?
আম্মুঃ রোহানের বেপার থেকে শুরু করে সব কিছুই জানি। তবে মেয়েটা না বুঝে ভুল করে ফেলেছে। তাই বলে তুইও ওর মতো ভুল করবি? (কথাটা বলেই আম্মু আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালো।
আমারও কেনো যেনো কিছু ভালো লাগছিলো না,,, তাই রুমে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। এমন সময় রিয়া এসে বললঃ তুমি কি ফ্রি আছো?
আমিঃ হুম। কিন্তু কেনো?
রিয়াঃ না মানে একটু আমাদের বাসায় যাবা,, আব্বু আম্মুকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমিঃ ( কিছুদিন পরেই তো একেবারের জন্য তোমার আব্বু আম্মুর কাছে চলে যাবে,,, এই কথাটা বলতে গিয়েও কেনো যেনো বলতে পারলাম না) আচ্ছা কখন যাবে।
রিয়াঃ (মুখে মলিন হাসি বজায় রেখে বললো,,,) বিকেলে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর বিকেল হতেই,, রিয়াকে নিয়ে ওর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।গাড়িতে বসে আছি এমন সময় রিয়া আমাকে বলে উঠলোঃ সাদ,, এটাই হয়তো আমাদের বাসায় তোমার শেষ যাওয়া তাইনা?
আমিঃ হয়তো।
রিয়াঃ আচ্ছা তোমার হাত টা একটু ধরতে পাড়ি?
আমিঃ (আমি রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ও কান্না করতেছে,,) হুম ধরো। আর শুনো এখন আর কান্না করে কোনো লাভ হবেনা। নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করো।
রিয়াঃ বিলিভ করো আমিনা অনেক ট্রাই করেছি,,, কিন্তু আমি কি করবো,, আমি যে পারতেছি না 

আমিঃ সময় নাও আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পরই আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছালাম। মানে আমার শশুর বাড়িতে।
তারপর শশুর বাড়িতে যেই পা রাখলাম,, আমার মহামান্য শশুর মশাই আমাকে দেখিবার মাত্রই,,মুখে এক গাট্টি হাসি বজায় রাইক্ষা আমার দিকে এগুতে এগুতে বললঃ আরে আমার জামাই বাবা আসছে
তা এতদিন পর আমার কথা মনে পড়ল?

আমিঃ আব্বাজান আমারতো আপনার কথা প্রতি মুহুর্তেই মনে পড়ে,,, তাই তো আপনাকে দেখতে চলে এলাম
,,তা আব্বাজান আপনি ভালো আছেন তো?

রিয়ার আব্বুঃ হ বাবা,, তুমি চলে আসছনা এখন তো এমনিতে ভালো থাকমু
যাও বাবা ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম করে নাও।

তারপর শাশুরী আম্মার খুজ খবর নিয়েই ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিশ্রাম নিচ্ছি।
এমন সময় আমার শাশুড়ী আম্মা আইসা আমার আব্বু আম্মু সহ আমার ১৪ গুষ্ঠির খুজ খবর লইয়া আবারো আমারে একা রুমে থুইয়া আমার শাশুড়ী আম্মা ভাগা। দিলো।
তারপর ঘন্টাখানেক শশুর বাড়িতে কাটাইয়া আবারো রিয়ারে লইয়া আমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম।
পরের দিন...
আর মাত্র ২ দিন....
এই ২ টা দিনই আমি আর রিয়া এক সাথে থামকে পারবো,,, তারপরই সব শেষ। দুপুরের দিকে মোবাইলের কলের রিংটোন টা বেজে উঠতেই দেখি,, রুবেলের কল,,,
আমিঃ (রিসিভ করে) কিরে?
রুবেলঃ সাদ,, তুই এক্ষুনি একটু আমাদের আড্ডাখানায় আয় তো।
আমিঃ এখন আসতে পারবো না,, আমার ভালো লাগছে না।
রুবেলঃ দুস্ত খুব জরুরি দরকার,, প্লিজ তুই আয়।
আমিঃ (কি যেনো কি ভেবে বলে দিলাম)
আচ্ছা ঠিক আছে আসতেছি।
তারপর হাতে টিশার্ট টা নিয়েই আড্ডাখানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম, ,, ওখানে যেতেই দেখি রুবেলের সাথে রিয়ার আব্বুও বসা। আমি রিয়ার আব্বুর কাছে গিয়েই...
আমিঃ আব্বা আপনি এখানে! ,,, তো বাসায় চলেন।
রিয়ার আব্বুঃ( উনি দাড়িয়ে আমার কাধের উপর হাত দিয়ে একটা দৃর্ঘশ্বাস ছেড়ে) না বাবা বাসায় যাবো না।
আমিঃ সেকি! কেন?
রিয়ার আব্বুঃ তুমি অন্তত আমাকে জানাতে পারতে! তুমরা নিজেদের ইচ্ছে অঅনুযায়ী আলাদা হয়ে যাচ্ছো।
আমিঃ আব্বা,, আপনি এসব কেমনে জানলেন!?
রিয়ার আব্বুঃ কালকে রিয়াকে দেখে কেমন যেনো মন মরা মন মরা লাগছিলো,, পরে দেখলাম যে রিয়া ওয়াস রুমে গিয়ে কান্না করতেছে। আমার তখনই সন্দেহ হয়,, তোমাদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। তারপর খুজ খবর নিয়ে জানতে পাড়লাম তোমারা আলাদা হয়ে যাচ্ছো। আচ্ছা তোমদের সমস্যা টা ওটাও আমি জানতে চাইনা,, শুধু আমার কষ্টটা এখানেই,, তোমারা আমাদের কিছু না জানিয়েই,,, দেখ বাবা আমি জানি আমার মেয়ের সাথে কেওই সুখি হতে পারবে না,,, কিন্তু তোমাকে দেখে আমি ভরসা পেয়েছিলাম,, অন্তত তুমি আমার মেয়েকে বুঝতে পারবা। তাকে কখনো ছেড়ে যাবা না।আচ্ছা আমার একটু তাড়া আছে,, আমি যাচ্ছি।
আমিঃ আব্বা শূনেন? (রিয়ার আব্বু আমার কথায় কান দিয়েই গাড়িতে উঠে উনার মত উনি চলে গেলো। আমিও কোনো কিছু ভাবতে পারছি না,, কি থেকে কি হয়ে গেলো!)
পরের দিন.....
রিয়াকে নিয়ে উকিলের অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। আজকেই হয়ত আমাদের বিশ্ব টা আলাদা হয়ে যাবে,,, আর মাত্র কয়েকটা মিনিট আমারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে থাকব। লক্ষ্য করালাম রিয়া স্থব্দ হয়ে গাড়িতে বসে আছে। মুখে একটুও হাসি নেই,,, আছে শুধু হাহাকার,, বিস্বাধের যন্ত্রনার ছাপ। মেয়েটা নিজেও কখনও ভাবে নি তাকে একদিন এমন একটা কঠিন পরিস্থিতির সিকার হতে হবে। গাড়ির থেমে যাওয়ার আওয়াজে বাইরে তাকাতেই দেখি আমরা আমাদের গন্তব্যে চলে এসেছি,,, গাড়ি থেকে নেমে,, রিয়া কেও নামতে বললাম,, তারপর রিয়াকে নিয়ে উকিলের অফিসে ঢুকতেই,, উকিল সাহেব আমাদের বসতে বললেন।
উকিলঃ তা আপনাদের মতামত কি?
আমিঃ (রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ও আনমনা হয়ে মানষিক রুগির মত স্থব্দ হয়ে আছে,,, আমি রিয়াকে একটা ঝাকুনি দিয়ে) রিয়া তুমি ঠিক আছো তো?.
রিয়াঃ (আমার ঝাকুনিতে ওর ঘোর কাটে)হা হ্যাঁ আ আমি ঠিক আছি।
আমিঃ (উকিল সাহেব কে উদ্দেশ্য করে) আমরা এই ৩ মাসে যতটুকু বুঝতে পারলাম,, আমারা কখনই আলাদা হয়ে ভালো থাকতে পারবো,,, সো আমরা ডিভোর্স চাচ্ছি না।
আমার মুখে এই কথাটা শোনা মাত্রই রিয়া হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,, মনে হচ্ছে আমাকে ও এর আগে কখনো দেখেই নাই। তারপর আমি রিয়ার হাতটা ধরে হেচকা টান দিয়ে চেয়ার থেকে উঠিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললামঃ এই যে মিস চলেন বাসায় যেতে হবে। তারপর রিয়াও একটা সেইই লেবেলের হাসি মাইরা কইলোঃ হুম চলেন আমার বাবুর আব্বু।
তারপর সোজা গাড়িতে উইঠাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম,,, গাড়িতে বসে আছি,, এমন সময় রিয়া বলে উঠলোঃ আচ্ছা একটা কথা আমি কিছুতেই মিলাতে পারছি না!
আমিঃ কি কথা 

রিয়াঃ তোমার রুহির কি হবে গো 

আমিঃ
লে খোকা তাইতো! আচ্ছা সমস্যা নাই তোমার শতীন বানায়া নিমু
?


রিয়াঃ( এক বালতী রাগ মাথায় লইয়া) কিহ! হারামজাদা তুই শুধু আমার। অন্য কেউ ভাগ বসাতে আসলে মেরে তক্তা বানায় দিবো।
আমিঃ 
ভাইরে এইবার আমার কলার টা ছাড়,,, আর রুহি বলতে কেও নাই,, ওটা এমনি তোমাকে বলেছিলাম 



রিয়াঃ কিহ! তারমানে তুমি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য,,, ওওওওয়া ওওওওয়া 

আমিঃ (আমার বুকের কাছে জরিয়ে নিয়ে) অলে আমাল সোনাটা,,, তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বলিনাই তো,,, তুমি যেনো আমাকে কখনও ছেড়ে না যাও,, অই জন্য অইটা করেছি। এখন তো বুঝতে পারছ,, প্রিয় মানুষ টা অন্য কারও হয়ে গেলে কতটা কষ্ট হয়।
রিয়াঃ আই এম রিয়েলি সরি
।

আমিঃ এই লক্ষি সরি বলা লাগবে না।
তারপর বাসায় ফিরতেই আম্মু আমাদের দুইড্ডারে এক লগে দেইক্ষা সেই লেবেলের শক্ট খাইয়া ফিট হইয়া গেলো,, আর খুশতে গদগদ করতে আমার পেটে একখানা গুতা মাইরা কইলো,, আমার কিন্তু খুব তারাতারি একটা নাতি চাই। আমিও এক ডিব্বা লজ্জা লইয়া অই স্থান থেকে ভাগা দিয়া সোজা আমার রুমে আইসা শুইয়া ঘুমাইতে লাগিলাম।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে আসতেই রিয়ারে কইলামঃ বউউউ ভউউউ গো,,,
রিয়াঃ হুম বলো আমার পরানের সোয়ামি।
আমিঃ আম্মা আজকে কি কইছিলো মনে আছে
উনাকে নাকি একটা নাতি আইনা দিতে হইবো।

রিয়াঃ এএএ যাহ,, তোমার লজ্জা সরম নাই পাঠকদের সামনেই এসব কথা বলতেছো 

আমিঃ হ তাই তো।
এএএএ ভাই যান ভাগেন,, আপনাদেরকে আর কিছু কওনা যাইতো না।
#সবাই ভালো থাকবেন,, সুস্থ থাকবেন,, আর পারলে এই ভাইয়াটার জন্যও একটু দোওয়া কইরেন,,, খুব প্যারার মধ্যে আছিরে ভাই
