লাল চুড়ি

লিখেছেনঃ Writer Srabon Ahamed Sayed

বাসর ঘরে প্রবেশ করে যেএই বউয়ের ঘোমটা উঠালাম, বউ আমার ছোটখাটো হাতির বাচ্চার মতো সুর করিয়া চিল্লায়া কইলো,,,, তুউউইই,,

আচমকা নতুন বউয়ের মুখে এমন শোনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম

তারপর একটু এক্সট্রা নজর লইয়া যেই বউয়ের দিকে তাকাইলাম

হাইরে এই মহিলারে তো আমি চিনি,,,নতুন বউ হিসেবে একটু এক্সট্রা কইরা আটা, ময়দা, সুজি মাখার কারনেই আমার বিশেষজ্ঞ দুইখান চোখ তাহাকে চিনিতে ব্যার্থ হইয়াছে,,,উরিমারে এই মহিলা তো আগেই আমার জীবন ত্যানা ত্যানা কইরা ছারছে,,,,, এখন আবার আমারে বিয়া কইরা নিছে, আমার সারাজীবন ত্যানা ত্যানা করার লাইজ্ঞা,,

কথাটা ভাইব্বাই দুঃখের ঠেলায় অক্করে কাইন্দালছি,,,

ওওওওওওয়া,,, ওওওওয়া,,, ওওওওওয়া

আসলে দুঃখের কথা কি আর কমুরে ভাই,,

এই মাইয়া আমার Ex gf। নাম রিয়া (অরুফে,, মহিলা সইতান) জীবনের প্রথম একটা কিউরেটর বদনা থুক্কু ডিব্বা মাইয়া দেইক্ষাই প্রেমে পইরা গেছিলাম,,, আর অনেক কষ্ট করিয়া তাহার সাথে লাইনটা লাগাইলাম,,, কিন্তু সেই কষ্টের ফল আর পাইলাম কই ৩ মাস এই বজ্জাত বেডির লগে রিলেশন ছিলো,,, আর এই ৩ মাসেই আমার মতো একটা পিচ্চি কিউট পোলারে অক্করে,,,থাক আর কইতে পারমু না,, আমার কান্দন আইতাছে

তারপর হঠাত করেই গত ১৭ দিন আগে তাহার সাথে একটা বিষয় নিয়া সেই লেবেলের ঝগরা বেধে গেল,,, আর ও সাফ জানিয়ে দিলো আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখবে না,,, আর আমিও সুযোগ পাইয়াই তাহার জীবন থেকে ভাগা দিলাম

তারপর এক বস্তা খুশি মনে লইয়া এক্কেবারে আড্ডাখানায়,,,

(আড্ডাখানায় যেতেই)

রুবেলঃ কিরে বেটা,,, কি হইছে তোর এমন ছাগলের মতো লাফাইতেছিস কেন!

আমিঃ আরে বেটা,, রিয়ার সাথে ব্রেকাপ হইয়া গেছে

হাবিবঃ লে খোকা ব্রেকাপ হলে মানুষ আপসেট থাকে,,, আর তুই এমন ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফাইতেছিস!

আমিঃ আরে বেটা,, লাফামুনা তো কি করমু? ওই মাইয়া আমারে ভালোবাসে না,,,

রুবেলঃ দেখ দুস্ত,, আমি তোর মনের অবস্থাটা বুজতে পারছি,,, প্লিজ দুস্ত তুই মন খারাপ করে থাকিস না,, দেখবি রিয়া দুয়েকদিন পরই আবার তোর কাছে ফিরে আসবে,,, প্লিজ দুস্ত আমার তুই স্বাভাবিক হ

আমিঃ আরে ধুর ব্যাটা,,, আমি তো স্বাভাবিক ই আছি,,, আমাকে দেখে কি তোর পাগল মনে হচ্ছে নাকি!

হাবিবঃ রুবেল রে ও মনে হয় ব্রেকাপের কষ্টটা সহ্য করতে না পেরে এমন পাগলামো করছে,,,

আমিঃ ধুর হালারা,,, তোরা তোদের চিন্তা নিয়া থাক আমি গেলাম

( কথাটা কইয়াই বাড়ির উদ্দেশ্যে ভাগা দিলাম,,,পিছন থেকে হারামিগুলা ডেকেই যাচ্ছে,,, আমি ওদের ডাকে কোনো সারা না দিয়ে আমার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি,,,)

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে শুয়ে ভাবছি,, আচ্ছা রুবেল ত বললো রিয়া আবার আমার লাইফে ফিরে আসবে,, আর আমি শুনেছি রিলেশনে এসব ব্রেক আপ হয় ই,,, আবার কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যায়,,, উরিমারে এই মাইয়া কি তাইলে আবারো আমার লাইফে বেক করতে চাইবে,, খাইছেরে যেই বজ্জাত মাইয়া এইড্ডা আমাকে ব্লেক মেইল করে হলেও আমার লাইফে আবার বেক করবেই ,,নাহ আমাকে একটা ব্যবস্থা করতেই হবে,, যেনো ও আর আমার লাইফে বেক করতে না পারে,,,

উউউউউম্মম্ম আআহহ বুদ্ধি পাইয়া গেছি,,

বিয়া কইরালমু

কিন্তু আমিতো এখনো অনেক চুডু আম্মু আমারে বিয়া করাইবো তো? নাকি ঠেংগা লইয়া দৌড়ানি দিবো

আর বিয়া না করলেও তো রিয়া আবার আমার লাইফে,,,খাইছেরে,,, আমি আর ভাবতে পারছি না,, যেভাবেই হোক আম্মুকে রাজি করাতেই হবে,,, এখানে আমার জীবন মরনের প্রশ্ন,,,

আর সাত-পাঁচ কিছু না ভেবেই ফট কইরা আম্মুর রুমে গিয়ে,,, একেবারে নিষ্পাপ বাচ্চাদের কন্ঠে সুর তুলিয়া আমার আম্মাজানকে ডাক মারিলাম,,,, আয়ায়ায়াম্মম্মু

আম্মুঃ( আমার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন) কি বেপার ছোট মিয়া! এতো রস লাগাইয়া ডাক দিতেছো,,,মতলবটা কি? টাকা লাগবে,,

আমিঃ আরে আম্মু তুমিতো দেখি আমাকে ভালোইবাসো না আমি আসছি কোথায় তোমার কষ্ট টা একটু কমিয়ে দিতে,, আর তুমি কিনা,,,

আম্মুঃ ওও মায়া মায়াগো,,, আমার বাজান আসছে আমার কষ্ট কমিয়ে দিতে,, আমার আব্বাজান ডা খত্ত ভাবে আমার কথা,,,তা বলেন ছোট মিয়া,, কি বলতে চান?

আমিঃ ( এক্কেবারে আম্মুর কাছে গিয়ে বসে উনার পা টিপতে টিপতে) আচ্ছা আম্মু ভাইয়াতো বিয়ে করে ভাবিকে নিয়ে চিটাগাং এ থাকে,,,আর আব্বুও সারাদিন ব্যাবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত,, তুমি সারাদিন একা একা বাসায় থাকো,,, তোমার কি কষ্ট হয়না বলো,,, আর তোমার বয়স হইছে আর এই বয়সেও তুমি একা একা রান্নাবান্না করো,,, তোমার তো একজন সঙ্গি প্রয়োজন,,,,

আম্মুঃ তো তোর কথা কি,,,তোর ভাইয়া চাকরি রেখে বউ নিয়ে এই কিশোরগঞ্জে এসে বসে থাকবে,,,

আমিঃ আম্মুউউ তুমিওনা,,, ভাইয়া কেনো আসতে যাবে,,, ( এক্কেবারে সেই লেবেলের অভিমান লইয়া) আজব আমি যে বড় হইছি সেটা কারোর চোখেই পড়ে না

আম্মুঃ মানে,,

আমিঃ আমার কথা চিন্তা করলেও তো বাসায় আরেকজন মানুষ আনা যায়

আম্মুঃ এএএএএএ তোর মাথাটাতা ঠিক আছেতো!! মাত্র অনার্স ২য় বর্ষে পড়ুয়া ছেলে নাকি ,,,ছি ছি ছি,, আর তোর মতো ফাজিলের হাড্ডির লগে কোন বেডায় তার মাইয়া দিবো হু,,সারাদিন ফটং ফটং কইরা বেড়াস,,

আমিঃ আম্মু,,, থাক আমার ভুল হইয়া গেছে,,, আর জীবনেও তোমাদের ভালো চাইতে আসমু না হু ( কথাডা কইয়াই আম্মুর রুম থেকে দ্রুত গতিতে আমার রুমের উদ্দেশ্যে ভাগা দিলাম)

ধেৎ এতো পাম টাম মাইরাও কোনো লাভ হইলো না,,,

রাতে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকিং করছিলাম এমন সময় আম্মু আমার রুমে এসে

আম্মুঃ কি বেপার ছোট মিয়া,,, আপনি কি বিজি?

আমিঃ না বিজি থাকবো কেন,,, কিছু বলবা?

আম্মুঃ হুম,, আসলে আপনার আব্বুর সাথে আপনার বিয়ের বেপার নিয়ে কথা বললাম,,, উনিও বললেন বাড়িতে একজন মানুষের প্রয়োজন ই,,, তাই আমিও ভাবলাম আপনার প্রস্তাব টা রাখা যায়,,,

আমিঃ আয়াম্মম্মু

আম্মুঃ আচ্ছা তুই কি প্রেম টেম করিস না?

আমিঃ (এক্কেবারে সেই লেবেলের সাধু সাইজ্জা) আম্মু তুমি এটা কি বললা হে আমি কেন সুধু সুধু প্রেম করতে জামু,, আমি তোমার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো,,তাই এসব নিয়ে কোনোদিন ভাবিওনাই,,,

আম্মুঃ হুম হইছে,, আর ডায়ালগ মারতে হবে না,,,, আকাইম্মা,, একটা প্রেমও করতে পারস নাই,,, আর তোর সাথে কোন মাইয়া প্রেম করতে আসবে,,, তোর মতো ফাজিল বেডারে কোন মাইয়া পছন্দ করবে,,, ( দেখছেন নি কারবারটা,,, আমারে খোটা দিতেছে,,, এইই মহিলা তুমি আমার আম্মু না হইলে ইচ্ছা মতো এক গাট্টি কথা শোনায়া দিতাম,,, আম্মু লাগো তাই কিছু কইলাম না)

আমিঃ আম্মু এটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে

আম্মুঃ হয়েছে আর ঢং করতে হবে না,,,

আমার একটা বান্ধবীর মেয়ে আছে,, শুনেছি মেয়েটা খুব লক্ষী,, কালকে ১২ টার দিকে ওখানে যাবো তুই রেডি থাকিস,,

আমিঃ আম্মু,, শোননা,, তুমিই আব্বুকে নিয়ে দেখে আসো,,, পছন্দ হলে কথাবার্তা পাকা করে আসবা,,, আমি তোমার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো,,, আমি অকে একটাবারের জন্য দেখতেও চাইবো না,,

আম্মুঃ মানে কি,,, তুই বিয়ে করবি,, অথচ তুই মেয়ে দেখবি না,,,

আমিঃ আম্মু আসলে আমিও দেখতে চাই আমার আম্মুনিটা কেমন মেয়ে আমার জন্য পছন্দ করে,, আমি একেবারে বাসর ঘরেই দেখমু

ভাইরে তারপর বাসর ঘরে আইসা দেখি অই মাইয়া আর কেউ না,, অইডাই রিয়ানি ,,,বেশি বালপাকনামি করতে গিয়া নিজেই ধরা খাইয়া গেলাম,,, কথায় আছেনা,,, অতি চালাকের গলায় দড়ি,,, যেখানে ভাগের ভয়,, সেখানেই রাত হয়,,,

""""""""""""

তারপর আমি রিয়াকে বললামঃ ওইই ছেরি তুই শেষমেষ আমার ঘারেই চাপলি,,, বইনরে আমি তোর কি ক্ষতি করছিলাম,, কিল্লাই আমার জীবনেডা ত্যানা ত্যানা করবি,,,

রিয়াঃ ( আমার কাছে এসে আমার মুখের কাছে আংগুল এনে) অই হারামজাদা,, আমি তোর ঘারে চাপতে যাবো কেন। তুই আমাকে জেনেশুনে বিয়ে করছিস,,, উউউউহহু আমি কেন যে আম্মার কথায় রাজি হয়ে গেলাম,, একটা বার দেখলামওনা কাকে বিয়ে করছি। অই হারামজাদা তুই তো আমাকে বিয়ের আগে দেখছিস,, আর সেই জন্যে বিয়ের আগে আমার সাথে দেখা করতে চাস নি,,

আমিঃ এএএএএএএহহহহ আমার ঠেহা পরছে! তোর মতো বজ্জাত মহিলারে বিয়া করতে,,,, সইতানের নানী,,, তুই আগেই আমার জীবনডা শেষ কইরা,, এখন আবার আমারে বিয়া কইরা নিছস,,, অই তোর সমস্যা টা কি হে,,, আমারে সান্তিতে থাকতে দিবি না,,,

(এমন সময়ে আমাদের দরজায় ঠকঠক করে কেউ একজন নক করলো)

চলবে...

                                                                                                                                            পরবর্তী পর্ব

View all stories in series -