আমি হুট করে পিছনের দিকে তাকাতেই দেখি আম্মু আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে কি আম্মু আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। চারদিক টা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে যেতে লাগলো। আম্মুকে এখন কি বলব! আমার মাথায় কিছু ই আসতেছেনা। আম্মু কিছু বলতেছে না। শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে একবার আমার দিকে আরেকবার রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর হঠাৎ করেই আম্মু আমাদের কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেল।
রিয়াঃ (ভীতু হয়ে) আই এম সরি 
আমি ভাবি নাই এমনট হয়ে যাবে।
আমি ভাবি নাই এমনট হয়ে যাবে। আমিঃ আচ্ছা তুমি ঘুমাও,, আমি আম্মুর কাছে যাচ্ছি।
রিয়াঃ শুনো,, আমি কি তোমার সাথে আসবো?
আমিঃ নাহ,, তোমার আসার দরকার নেই।তুমি ঘুমাও। (কথাটা বলেই আমি আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালাম,, আম্মুর রুমে প্রবেশ করতেই দেখলাম আম্মু উইল চেয়ারে বসে দুল খাচ্ছে,, আমি আম্মুর কাছে যেতেই আম্মু চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়েই বললোঃ ছাদে আয়। )
তারপর আম্মু ছাদের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে লাগলো,, আর আমিও আম্মুর সাথে সাথে ছাদে পৌছালাম।
আম্মুঃ আমাকে জানালি না কেন?
আমিঃ আম্মু,, তুমি কষ্ট পাবে তাই
আম্মুঃ তো আজ না হয় কাল তো এটা সবাই জানবেই।
আমিঃ হুম,, কিন্তু যে কয়েকদিন এটা চাপা থাকবে,, ততদিনই তো তোমরা একটু হাসি খুশী থাকবে। আম্মু প্লিজ তুমি এই বিষয় টা আর অন্য কাউকে জানিও না।
আম্মুঃ আচ্ছা তোদের সমস্যা টা কি?
আমিঃ আম্মু প্লিজ ওসব জানতে চেও না। তুমি প্লিজ এই কথাটা আর কাউকে বইলো না।
আম্মুঃ (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আচ্ছা। তবে এটা ঠিক করছিস না। (কথাটা বলেই আম্মু ছাদ থেকে নিচে চলে যেতে লাগলো)
পরের দিন সকালে নাস্তা করেই রিয়া তার বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে গেলো। তারপর প্রায় বিকেলের দিকে বাসায় আসলো। রিয়া বাসায় আসতেই আমি আড্ডা খানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লাম,,, আড্ডাখানায় যাওয়ার পথে আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড ইকবালের সাথে দেখা।
ইকবালঃ আরে সাদ,, তুই! কেমন আছিস?
আমিঃ হুম ভালোই,,, তোর কি অবস্থা?
ইকবালঃ হুম ভালো।
আমিঃ তা তোকে তো দেখাই যায়না! থাকিস কোথায়?
ইকবালঃ আরে দুস্ত ভৈরব হাজী আসমত কলেজে এডমিট হয়ছিলাম,, এখন তো বাসা থেকে গিয়ে প্রতিদিন কলেজ করা সম্ভব না,,, আর নানার বাড়ি তো ভৈরবেই,,, তাই নানু বাড়িতে থেকেই পড়াশোনাটা চালাতে হচ্ছে।
আমিঃ ওও আচ্ছা।
ইকবালঃ তারপর তোর কি অবস্থা! শুনলাম বিয়ে করে নিয়েছিস। তা মামা ভাবিটাকে তো দেখাইলি না।
আমিঃ তোর ভাবিকে তো আগেই দেখেছিস।
ইকবালঃ মানে!
আমিঃ রিয়া ই তোর ভাবি।
ইকবালঃ কিহ! তারপর মানে তুই যার সাথে 
রিলেশনে গিয়েছিলি।
রিলেশনে গিয়েছিলি। আমিঃ হুম।
ইকবালঃ কিন্তু আমিতো সকালের দিকে খালার বাসা থেকে আসার সময়,, রিয়াকে দেখলাম অন্য একটা ছেলের সাথে একি রিক্সায় চড়ে ঘুরতেছে।
আমিঃ (ওর কথাটা শোনা মাত্রই ভেতর টা কেমন যেনো কেপে উঠলো) আরে নাহ! কি বলিস,, রিয়া তো রিয়ার বান্ধবির বাসায় গিয়েছে,, তুই হয়তো ভুল দেখেছিস।
ইকবালঃ আরে না ব্যাটা,,, আমার নিজ চোখে দেখেছি।
আমিঃ তাহলে হয়তো ওর কোনো আত্বিয় টাত্বিয় হবে। আচ্ছা দুস্ত,, তাহলে চল আড্ডা খানায়।
ইকবালঃ নারে দুস্ত,, আমার একটু বাজারের ভেতরে কাজ আছে।
আমিঃ অহহ। আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকিস।
ইকবালঃ হুম তুইও।
তারপর আমিও আড্ডাখানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম,, মাথাটা কেমন যেনো ঘুরছে,,, তাহলে রিয়াকি আমাকে মিথ্যে বললো,, ও কি কারোর সাথে রিলেশনে জড়িয়ে গিয়েছে! না না,, এটা কিভাবে সম্ভব! ও তো এমনটা করলে অন্তত আমি টের পেতাম। নাহ কিছুই ভাবতে পারছি না,, সব কিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নাহ কিছুই ভালো লাগছেনা,, তাই আড্ডাখানায় না গিয়ে আবারও বাসার দিকে পা বাড়ালাম,,, বাসায় পৌছে আমার রুমে যেতেই দেখি রিয়া বাছানায় শুয়ে টিভি দেখছে। আমি টিভির রিমোট টা হাতে নিয়ে টিভি টা অফ করে দিতেই রিয়া বলে উঠলোঃ কি বেপার! টিভি অফ করলা কেন?
আমিঃ( চেয়ারে বসতে বসতে) তুমি তোমার কোন ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলে?
রিয়াঃ কেনো?
আমিঃ জানতে চাচ্ছি আরকি।
রিয়াঃ আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
আমিঃ হ্যাঁ সেটাই তো,,, কারণ আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে তো তুমার সব কুকর্ম ধরা পড়ে যাবে।
রিয়াঃ কি বাজে কথা বলছো!
আমিঃ তুমি তোমার কোনো মেয়ে ফ্রেন্ডের বাসায় যাওনি। তুমি কার সাথে ঘুরতে বের হইছিলা? কোন নাগরের সাথে হু?
রিয়াঃ দেখ সাদ,, তুমি কিন্তু সীমা অতিক্রম করছো। আমি আফ্রিনের বাসায় গিয়েছিলাম,, ও অসুস্থ। তুমি আফ্রিন কে কল দিয়ে জানতে পাড়ো।
আমিঃ (পকেট থেকে মোবাইল টা বের করেই আফ্রিন কে কল দিলাম,,কল রিসিভ হতেই ) আসসালামু আলাইকুম?
আফ্রিনঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাইয়া কেমন আছেন?
আমিঃ জি বোন ভালো,,, শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ?
আফ্রিনঃ জী ভাইয়া একটু sick।
আমিঃ আচ্ছা,, রিয়া তোমাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলছিলো। ও কি তোমার ওখানে গিয়েছিল?
আফ্রিনঃ জী ভাইয়া সকালে এসেছিলো।
আমিঃ ওও। আচ্ছা ঠিক ঠাক সময়ে মেডিসিন খেয়ে নিও। রাখছি তাহলে।
তারপর লাইনটা কেটে দিতেই...
রিয়াঃ এবার বিলিভ হয়েছে তো। দেখো আমাদের আর কিছুদিন পরেই ডিভোর্স হয়ে যাবে,, এর আগে আর আমি কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না। (কথাটা বলেই রিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
আমারও ভালো লাগছিলো না,, তাই বিছানায় শুয়ে পড়লাম একটু বিশ্রামের জন্য ,, কিন্তু মাথা থেকে একটা বিষয় কিছুতেই যাচ্ছে না,, ইকবাল কি তাহলে সত্যিই ভুল দেখলো?
২১ দিন পর.....
রাত প্রায় ৩ টা,,,কোনো এক অজানা কারণেই ঘুমটা ভেঙে গেলো,,,হঠাৎ বিছানার দিকে চোখ যেতেই দেখি রিয়া বিছানায় নেই,,, কি বেপার! এতো রাতে রিয়া কোথায় যাবে? মুহুর্তের মধ্যেই আবার ভাবলাম,,,হয়তো টয়লেটে গিয়েছে। কথাটা ভেবেই আবার চোখের পাতা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু রহস্যাময় বেপার হলো,, আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো,,, কিছু একটা ঝামেলা আছে। নাহ একটু সজাগ থেকে দেখিতো। টয়লেটে গেলে তো ১৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা না ,, ২০ মিনিট হয়ে যাবার পরও রিয়ার কোনো খোঁজ ই নাই! বিছানা থেকে উঠে দৃড় পায়ে আসতে আসতে টয়লেটের দরজার কাছে গিয়ে দরজায় কান রাখতেই যা শুনলাম তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
ভেতরে যা ঘটছে.....
রিয়া সম্ভবত কারও সাথে সম্পর্কে জরিয়ে গিয়েছে,, আর তার সাথেই মোবাইলে কলের মাধ্যমে কথা বলছে....
রিয়াঃ বাবু,, তুমি একদম টেনশন করো নাতো। সাদ এর সাথে আমার ডিভোর্স টা হয়ে গেলেই আমরা বিয়ে করে নেবো।
অপর পাশ থেকেঃ কি বলো তুমি এসব! আমি টেনশন করবো নাতো কে করবে! তোমাকে অন্যের ঘড়ে রেখে আমি কিভাবে টেনশন মুক্ত থাকি তুমিই বলো?
রিয়াঃ হুম,, আমি বুঝিতো তোমার কষ্ট হয়। কিন্তু আমিও তো তোমাকে ছাড়া ভালো নেই 
। আর মাত্র ২ মাস ৯ দিন। তারপর ই আমরা এক হয়ে যাবো।
। আর মাত্র ২ মাস ৯ দিন। তারপর ই আমরা এক হয়ে যাবো। ****নাহ কথাগুলো আর শুনতে পারছি না দরজার কাছ কান টা সরিয়ে নিলাম। ভেতরটা কষ্টে আর ঘৃনায় ফেটে যাচ্ছে। আমি কিনা তাকে হারানোর জন্ত্রনায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম! দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গিয়েছে,,, কিছুক্ষণ পরেই রিয়া টয়লেট থেকে বের হতেই আমাকে দেখে থমকে গেলো। ভয়ার্থ চেহারা নিয়ে রিয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
*পরবর্তী পর্ব আগামীকাল দুপুর ২ টায় প্রকাশ করা হবে। by the grace of Allah 
