Type Here to Get Search Results !

ভালোবাসা দিবি কিনা বল (পার্টঃ১৫)

 লিখেছেনঃ Md Asif

নিশাতের মতই মোহনা যে আমার জীবনের একটা
অংশ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত আম্বুলেস্ন কল করে মোহনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওটিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মোহনাকে স্টেচারে করে। মোহনা বলল----
: দেখো, নিজের খেয়াল রেখো। আমি বাচবো কীনা জানিনা।
: একটুও বাজে কথা বলবে না। তোমার কিছু হবে না। আমার জন্য তুমি নিজের জীবনকে বিপদে ফেলেছো। আমি তোমার কিছু হতেই দিবো না।
: একটা কথা, আমার ইচ্ছা ছিলো তোমার বউ হবো কিন্তু আমার কপালে মনে হয় সেই ভাগ্য নেই। নিশাত তোমাকে খুব ভালবাসে। তুমি ওকে
খুব ভালবেসো। ( কন্ঠ শুনে মনে হয় অনেক কষ্ট করে কথা বলছে)
: আর একটাও কথা বোলো না। তোমার কষ্ট হচ্ছে।
আর কিছু বলতে পারলাম না। মোহনাকে ওটির ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। কতটা নিঃশ্বার্থ ভাবে কাউকে ভালবাসলে তার জন্য এই প্রাণ সংশয়ের সময়ও ভাবা যায়। আমাকে কতটা ভালবাসে মেয়েটা। আমি হয়তো ওর ভালবাসার অনু পরিমান ওকে ভালবাসতে পারি নি। ওকে হারালে আমার জীবনটা যে অপূর্ণ থেকে যাবে।
ভাইয়াকে ফোন করলাম। তারপর মোহনার বাড়িতে ফোন করলাম। ১০ মিনিটের ভিতরে সকলে চলে আসলো। আমি সকলকে যেটা ঘটেছে সেটা বলে দিলাম। মোহমার আম্মু কেদে দিলো। একমাত্র মেয়ে এমন কঠিন বিপদে থাকলে কী কোনো মা ঠিক থাকতে পারে। ভাইয়া গুন্ডাদের খোজে বের হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার ওটি থেকে বের হলো। ডাক্তার বললো -----
: ইমিডিয়েটলি 0+( পজেটিভ) রক্ত দরকার। রোগির প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে।
: আমার রক্ত নিন যত লাগে তত ( মোহনার আম্মু)
: আপনার রক্তের গ্রুপ কী? ( ডাক্তার)
: আমার তো A+ ( পজেটিভ)( মোহনার আম্মু)
: নাহ, আপনার রক্ত পেশেন্টের রক্তের সাথে ম্যাচিং করে না। জলদি রক্ত লাগবে। আমাদের ব্লাড ব্যাংকে এই গ্রুপের রক্ত বর্তমানে নেই।
: যে করেই হোক, আমার মেয়েকে বাঁচান। ( মোহনার আম্মু)
: আমার রক্তের গ্রুপ 0+( পজেটিভ)। আমার কাছ থেকে রক্ত নিন। ( নিশাত)
: তুমি রক্ত দিবে ( আমি)
: কেন, আমি দিতে পারি না। মোহনা আমার জন্য এত কিছু করেছে আর আমি কিছু করতে পারবো না আমার সামর্থ্য থাকা সত্বেই।( নিশাত)
: এখন এত কিছু ভাবার সময় নেই। রোগির অবস্থা খুব ক্রিটিকাল।( ডাক্তার)
: আচ্ছা, আপনি চলুন। ( নিশাত)
: হুম চলো ( ডাক্তার)
তারপর নিশাত চলে গেলো। আজ এই সময় আমি কিছুই করতে পারছি না। সব হলো আমার জন্য অথচ আমারর কিছুই করার নেই।
এখন, চোখ ফেটে আমার পানি বের হতে চাইছে।
কিন্তু একটা কথা আছে না পুরুষমানুষের কাঁদতে নেই।
অনেকক্ষণ পর ডাক্তার ওটি থেকে বের হলো। ডাক্তারকে দেখে সকলে এগিয়ে গেলাম। আমি বললাম ----
: মোহনার এখন কী অবস্থা আঙ্কেল?
: আল্লাহর রহমতে অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।( ডাক্তার)
: তারমানে আমার মেয়ে এখন বিপদমুক্ত ( মোহনার আম্মু)
: হ্যা ( ডাক্তার)
: এখন কী মোহনার সাথে কথা বলতে পারি । ( আমি)
: নাহ, ওকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এখন ওর রেস্ট দরকার। বিকালে ওকে কেবিনে দেওয়া হবে। আপনারা ওর সাথে বিকালে কথা বলতে পারবেন।
: আচ্ছা । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ( আমি)
: না, আমাকে ধন্যবাদ দিবে না। এটা আমার কর্তব্য। বরং ওই মেয়েকে ধন্যবাদ দাও ( নিশাতকে দেখিয়ে)। ও যদি ঠিক সময় রক্ত না দিতো তাহলে হইতো পেশেন্টকে বাচানো যেতো না।
ডাক্তার চলে গেলো। আমি নিশাতের কাছে গেলাম। ওর হাত ধরে বললাম ---
: তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি না থাকলে হয়তো মোহনাকে আমরা বাচাতে পারতাম না।
: কিহ বলছো। মোহনার কারণে আমি তোমাকে আবার পেলাম। আমি ওর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
আর কিছু বললাম না। কিইবা বলবো আমি এক প্রেমিকা আরেক প্রেমিকাকে বাচাতে রক্ত দিলো। ইতিহাস হয়ে রইলো বটে। নিশাতকে অনেক জোড় করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। কারণ ওকে অনেক দুর্বল লাগছিলো। ওর প্রপার রেস্ট দরকার এখন।
বিকালে মোহনাকে কেবিনে দেওয়া হলো। ওর আম্মু, আব্বু সহ আরো অনেক আত্মীয় এসেছে। সকলেই মোহনার সাথে কথা বলছে। মনে হচ্ছে মোহনা এখন বিপদমুক্ত। আমি এক কোণায় দাড়িয়ে রয়েছি। এইবার মোহনার চোখদুটি আমার দিকে তাকালো। তারপর ওর আম্মুর কানে কী যেন বললো। এতে ওর আম্মু সকলকে চলে যেতে বললো। উনিও চলে গেলো। এখন আমি আর মোহনা রয়েছি শুধু। মোহনা আমাকে ইশারায় ডাকলো। আমি ওর কাছে গেলাম।
: এখন কেমন লাগছে ( আমি)
: ভালো। ( মোহনা)
: তুমি কেন এই সব করতে গেলে। তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমার কী হতো বল তো
: যাকে ভালবাসি তার জন্য করব না তো কার জন্য করবো।
: থাক আর দার্শনিকের মতো লেকচার দিতে হবে না। কিন্তু তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি কেমনে বাচতাম। সে কথা যদি তুমি বুঝতে।
: আর তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমি কী করে বাচতাম।
: আমাকে এত ভালবাসো কেন।
: ভালবাসি তাই ভালবাসি।
: আচ্ছা এখন রেস্ট নাও।
: এই কোথায় যাবে এখন। আচ্ছা নিশাতকে তো দেখছি না?
: বলা হয়নি, তোমার তো প্রচুর ব্লেডিং হয়েছিলো কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে নিশাত রক্ত দেয় তোমাকে। নিশাত রক্ত না দিলে তোমাকে বাচানো যেতো না। ওকে দুর্বল লাগছিলো তাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
: খুব ভালো করেছো। আচ্ছা, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাওনা।
: আচ্ছা, তুমি ঘুমাও আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ।
মোহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কিছু সময়ের মধ্য ঘুমিয়ে গেলো মোহনা। অনেক মায়াবি লাগছে ওকে। একেবারে বাচ্চার মতো লাগছে।
কিছু দিনের মধ্যে মোহনা সুস্হ হয়ে উঠে। আমার আব্বু-আম্মু, ভাই-ভাবি সকলেই এসেছিলো মোহনাকে দেখতে। আমি রোজ মোহনার বাড়ি যেতাম। ওর সাথে সময় কাটাতাম। মনে হতো এই সময়টুকুই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
আজ অনেকদিন পর কলেজে যাচ্ছি। নিশাতও আমাদের কলেজে ভর্তি হয়েছে। ৩ জনে একসাথে কলেজে যাচ্ছি। মোহনা এখন পুরোপুরি সুস্হ। আমাদের ত্রিকোণ ভালবাসার গল্প এখন সবাই জেনে গেছে। কলেজে তো আমরা এখন আলোচনার মুখ্য বিষয়।
আমরা ওইসব বিষয়ে কান দিই না। নিজেদের মতোই চলতে থাকি আর প্রেম করতে থাকি।
একদিন কলেজে আমরা ৩ জন বসে প্রেমালাপ করছিলাম এইসময় ভাইয়া আসলো। ভাইয়ার সাথে সেই গুন্ডাগুলো যেগুলো মোহনাকে গুলি করেছিলো। ভাইয়া বললো -----
: এরাই তো সেই গুন্ডার দল?
: হুম ভাইয়া।
: তবে এদেরকে ভাড়া করা হয়েছিলো তোকে মারার জন্য।
: কিন্তু আমাকে মারবে কে?
: আমিও তার নাম শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু পরে তার মুখ থেকে শুনে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।
: কিন্তু কে সে? আমার চেনা কেও?
: তুই নিজেই দেখে নে। এই ওকে নিয়ে আসুন ।
তারপর একজন কনস্টেবল একজনকে নিয়ে আসলো। একজন মেয়ে। ওর চেহারা দেখে আমি সহ উপস্হিত সকলে অবাক। মেয়েটা আর কেউ না সে হলো তাসনীম। আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। তাসনীম মাথা নিচু করে আছে।
ভাইয়া বললো ------
: তুই কী জানিস। ও তোকে কেন মারতে চেয়েছিলো?
: আমি কী এমন করেছি যার জন্য ও আমাকে মারতে চাইবে।
: তুই ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিলি না। আর ওর আব্বুকে অপমান করা হয়েছিলো। এই জন্য।
: ছিঃ। আমি ভাবতে পারছি না। তাসনীম এত নীচ মনের।
: আচ্ছা, আমরা এখন ওকে নিয়ে যাবো।
: ওকে ছেড়ে দাও ভাইয়া। ও যদি শুধরে যায় তাহলে ওর জন্য ভালো। আর ওর মতো মেয়ে জন্য এইসব খুব দরকার।
: তুই একেবারে ঠিক বলেছিস ভাই। আমি ওকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাবস্হা করছি।
: আচ্ছা।
ভাইয়া চলে গেলো। আমিও ওদেরকে নিয়ে চলে আসলাম। ওদেরকে বাড়ি পৌছে দেওয়া এখন আমার দায়িত্ব। দায়িত্ব বলতে ওদের পরিবার আমাকে দিয়েছে। আমিও নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছি। প্রেমিকা বলে কথা।
আজ বিকালে একটু একা ঘুরতে গিয়েছিলাম। একা বলতে ওদেরকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হয়। আজ কোনো রকমে ওদের ফাকি দিয়ে বেড়িয়ে এসেছি। মোবাইলে কথা বলছিলাম এক বন্ধুর সাথে। অন্যমনস্ক হয়ে কখন যে রাস্তার মাঝখানে এসেছি আমি নিজেই জানি না। হঠাৎ কীসে আমাকে ধাক্কা দেয়। আর কিছুই মনে নেই।
ঘুম ভাঙ্গলো। বুকটা এমন ভারি লাগছে কেন। তাকিয়ে দেখি আমার বুকের দুই পাশে দুইজন শুয়ে আছে। এখন মনে হয় রাত এইজন্য অন্ধকার লাগছে। আমার পানি তেষ্টা পেয়েছে। আমি পানি খাওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম তখনি ওরা আমার নড়াচড়া পেয়ে জেগে উঠে।
: পানি খাব ( আমি)
মোহনা আমাকে পানি দিলো। আহ, কত শান্তি লাগলো পানি খেয়ে। মনে হলো আমি কত যুগ ধরে তৃষ্ণার্ত আছি।
: আমার কী হয়েছিলো? ( আমি)
: তুমি এক্সিডেন্ট করেছিলে। সেস্নলেস হয়ে ছিলে তুমি। আজকে তোমার জ্ঞান ফিরলো। ( নিশাত)
: আচ্ছা, আমার আম্মু কোথায়? ( আমি)
: উনি অনেক সময় ছিলো তোমার এখানে। আমরাই জোড় করে ওনাকে সহ সকলকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি ( মোহনা)
: আচ্ছা, তোমরা এখানে থাকবে আমার সাথে। কিন্তু কেন?
: তোমার সাথে প্রেম করবো তাই।
: তাহলে আর দেরি করছো কেন। শুরু করে দাও। কিন্তু প্রথমে আমাকে পাপ্পি দাও।
আমার কথা আমার মুখেই রইলো তার আগে ওরা শুরু করে দিলো। দুইজন দুই দিক থেকে।
এখন একটা কথাই মনে হচ্ছে,
"" আমি পেলাম, অবেশেষে জোড়া প্রেমিকাই পেলাম ""
                                                            >>> The End <<<

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.