লিখেছেনঃ Md Asif
এইবলে মোহনা একটু হাসলো।
অন্যসময় এই হাসিটা
আমার কাছে অমূল্য কিন্তু
এখন আমার কেমন
জানি একটুও ভালো লাগছে না।
তারপর মোহনা
বলা শুরু করলো-------
: তোমার মনে হয়তো
প্রশ্ন জাগছে যে, নিশাত এখানে কেন?
: হুম।
: তুমি কী জানো, নিশাত
কেন তোমাকে ছেড়ে
চলে এসেছিলো?
: জানবো না কেন। আমার
মতো ক্ষ্যাতের সাথে
কী রিলেশন রাখা যায়।
আমার কথা শুনে নিশাত
কান্না করতে লাগলো।
কেন কাঁদবে ও।
আমারই বা এমন লাগছে কেন
ওর কান্না শুনে ।
আজকে আমার
সাথে যে কী হচ্ছে, আমি
কিছুই বুঝতে পারছি না।
মোহনার কথায়
আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
: তুমি ভুল জানতে।
: দেখো মোহনা, আমার
এইসব ভাল লাগছে না।
যেটা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
: আচ্ছা, সেটাই বলছি।
: সংক্ষিপ্তভাবে বলিও।
: আচ্ছা, শোন তাহলে।
" নিশাত একদিন
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে
মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
হাসপাতালে ভর্তি
করা হয় ওকে। ওকে টেস্ট
করে জানতে পারা
যায় ওর ক্লোন ক্যান্সার হয়েছে।
নিশাতের বাবা মা
সেটা নিশাতের কাছে
চেপে গেছিলো কিন্তু
সেটা নিশাত জেনে যায়।
ও বুঝতে পারে যে
পৃথিবীতে সময় বেশি নেই।
নিশাত জানতো তুমি
ওকে প্রচণ্ড ভালবাসতে।
নিশাত ভাবে,
আমার যদি কিছু হয়ে
যায় তাহলে তোমার কী হবে।
তাই নিশাত ঠিক করে
তোমার মনে ঘৃণা জন্ম
দিতে হবে তাহলে যদি
নিশাতের কিছু হয়ে
যায় তবুও তুমি কোনো
কষ্ট পাবে না।
প্লানমাফিক নিশাত
তোমাকে অপমান করে
এমনকি চড় পর্যন্ত মারে।
কিন্তু তোমার থেকে
বেশি কষ্ট হয়েছিল নিশাতের।
তার কিছুদিন পর
নিশাতের অপারেশন শুরু হয়।
প্রায় সবাই এমনকি
নিশাতও ধরে নিয়েছিলো
যে সে আর বাচবে না।
কিন্তু নিশাতের বাবা
আর মায়ের বিশ্বাস ছিলো
আল্লাহর ওপর।
মহান আল্লাহ তায়ালা
সেই বিশ্বাসের প্রতিদানও দিয়েছিলেন। অপারেশন সাকসেসফুল হয়।
বেচে যায় নিশাত কিন্তু
হারিয়ে তার জীবন থেকে তুমি।
তারপর তোমাকে হন্যে
হয়ে খুজতে থাকেনিশাত
কিন্তু সে জানতে পারে
তোমার বাবাকে ট্রাস্নফার
করা হয়েছে। সে ভাবতে
থাকে চিরদিনের জন্য
তোমাকে হারাতে হবে না তো।
কিন্তু না, অনেক ধৈয্য
ধারণের পর তোমার
খোজ পায় সে। হ্যা, বাবাকে
অনেক কষ্টে রাজি
করিয়ে এখানে আসে।
তারপর তোমার বাড়িতে
যায় কিন্তু তুমি সেই সময় বাড়িতে ছিলে না।
তোমার আম্মুর কাছ থেকে
তোমার বর্তমান অবস্হা
সম্পর্কে জানতে চাই।
তখন তোমার ভাবিও ছিলো।
তোমার মা তোমার বর্তমান
অবস্হা বলে এবং নিশাতদের
ওখানে থাকার সময়
অতীত ঘটনা বলতে যেয়ে কেঁদে ফেলে। নিশাতও কেঁদে ফেলে।
তোমার আম্মু কান্নার
কারণ জানতে চাইলে
নিশাত সবকিছু খুলে বলে।
আবারও তোমার আম্মুকে
ধরে কাঁদতে থাকে।
আসার সময় নিশাত
তোমার আম্মুকে বলে
আসে, যেন তার কথা না বলে।
তারপর তোমার কলেজে যায় কিন্তু তুমি নিশাতকে অপমান করো।
তারপর দুপুরে নিশাত কীভাবে
যেন আমার বাড়ির ঠিকানা
নিয়ে
আমার বাড়ি যেয়ে আমাকে
সবকিছু বলে। সত্যি বলতে
আমি ওর সবকিছু শুনে চোখে
পানি রাখতে পারি নি। কত ভালবাসলে
কারোর জন্য এত কিছু করা যায়।
আমি ওকে তোমার সাথে
কথা বলার ব্যবস্থা করে
দিবে বলে কথা দিয়েছিলাম।
আমি আমার কথা রেখেছি।
শেষে মোহনা বললো, আসলে
আমার ভালবাসা ওর কাছে কিছুই না।
বলা শেষ হলে আমি
খেয়াল করলাম আমার
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আমি কেন
কাঁদছি পুরুষ মানুষদের
তো কাঁদতে নেই কিন্তু
আজকে এই নিয়মের
তোয়াক্কা না করে কেন
আমার চোখ পানি ঝড়ালো
সেটা আমি বুঝতে পারলাম না।
আমি দ্রুত চোখের পানি
মুছে ফেললাম যাতে অন্য
কেউ না দেখে ফেলে।
নিশাতের দিকে এইবার তাকালাম।
নিচের দিকে রয়েছে।
আমার জন্য কত কষ্ট সহ্য
করেছে মেয়েটা।
আর আমি ওকে কত খারাপ ভেবেছি।
ছিঃ, এখন নিজের প্রতি
নিজেরই ঘৃণা লাগছে।
আমি আর কষ্ট দিবো না
মেয়েটাকে। কিন্তু মোহনার কী হবে।
মেয়েটাও যে আমাকে
পাগলের মতো ভালবাসে।
আমার ভালোর জন্য নিজের
ভালবাসাকে বলি দিলো।
আমি এখন কী করবো।
আপাতত, আগে নিশাতকে
সামলে নিই তারপর
এইসব নিয়ে ভাবা যাবে।
মোহনা বললো ---
: তোমরা এখন কথা বলো।
আমি একটু পর আসছি।
কোনো উত্তরের আশা না
করেই মোহনা উঠে গেলো।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে
দেখলাম, চোখদুটো ছলছল করছে।
আসলে নিজের ভালবাসাকে
অন্যের হাতে দিলে কেমন লাগে
সেটা সেই বোঝে যে তুলে দেয়।
একবার আমার দিকে
আর একবার নিশাতের
দিকে তাকিয়ে চলে গেল।
আমারও খারাপ লাগছে ওর জন্য।
সাতপাঁচ না ভেবে নিশাতের
কাধে হাত দিলাম।
নিশাত আমার দিকে তাকালো।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, নিশাতের
চোখ দুটোও ছলছল করছে।
মনে হয় এক্ষণি বৃষ্টি হবে।
আমি আমার হাত জোড়া
দুইদিকে ছড়িয়ে দিলাম।
যেমন করে জড়িয়ে ধরতে
দেওয়ার সময় ছড়িয়ে দেয়।
নিশাতও আমাকে জুড়িয়ে
ধরে খুব জোড়ে কাঁদতে
লাগলো। আমার শার্ট
লোনা পানিতে ভিজে যাচ্ছে।
কাদুক আজকে।
অনেকদিনের
জমানো দুঃখ, কষ্ট আজ
না হয় পানির মতো ঝরে পরুক।
আমি আমার ভালবাসার
উষ্ণ আলিঙ্গনে নিশাতকে
জড়িয়ে রেখেছি।
দীর্ঘক্ষণ কান্না করার পর মনে
হলো কান্না একটু কমলো।
আমি বললাম ------
: আর কেঁদো না তুমি।
কাঁদলে কিন্তু....।
আর কিছু বলা লাগলো না।
আমার এই একটা কথায়
নিশাত কান্না থামালো।
আমি ওর মুখের দিকে
একপলকে তাকিয়ে আছি।
কী স্নিগ্ধতা এই মুখে, সারাজীবন
এই প্রশান্তি ভরা মায়া
মুখ খানি দেখে যেতে পারবো।
: এই, কী দেখো এমন করে ( নিশাত)
কি মিষ্টি হয়েছে নিশাতের কন্ঠস্বর।
অবশ্য আগেও শুনেছি
তবে এতটা খেয়াল করিনাই।
নিশাতের সবকিছুই পাল্টে গেছে।
এখন আর ছোট্ট নিশাত
নেই, সে এখন একজন পরিনত নারি।
কয়েকটা বছরে এতটা
পাল্টে যাবে ভাবিনি কখনো।
অথচ আমি এখনো আগের মতই আছি।
: এই, কি ভাবছো?
নিশাতের ডাকে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম।
: আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ( আমি)
: তুমি কেন ক্ষমা চাইছো
( মনে হলো একটু অবাক হয়েছে)
: আমি তোমাকে অপমান
করেছি, তোমার
সম্পর্কে খারাপ ভেবেছি।
: তোমার তো কোনো দোষ না।
আমার কারণেই তুমি
আমাকে ভুল বুঝেছো।
: তুমি তো সেটা আমার জন্য করেছিলে।
: বাদ দাও তো।
যেটা অতীত সেটা
অতিতেই থাকতে দাও। বর্তমানে
এনে লাভ কী ।
অবশেষে আমরা আবার
এক হলাম আল্লাহ তায়ালার কারণে।
: হুম। এজন্য শুকরিয়াআদায়
করা উচিত "আলহামদুলিল্লাহ।
"
কথার বলার শেষে
দেখলাম কয়েকটা
ছেলে আমাদের থেকে কিছুটা
এসে দুরে দাড়ালো।
পোশাক-আশাক আর
চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে
এরা সকলেই গুন্ডা।
কিন্তু এখানে কেন এসেছে।
দেখলাম একটা ছেলে
গান ( পিস্তল) বের করলো।
তাক করে ধরলো আমার দিকে।
একটা শব্দ হলো আর
একটা আত্নচিৎকার।
ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে
গেলো যে কিছুই বুঝতে পারলাম না ।
আমি নিজেকে নিচে আবিষ্কার
করলাম তবে আমার কিছু হয়নি।
তাকিয়ে দেখি আমার
জায়গায় রক্তাক্ত শরির নিয়ে
মাটিতে পড়ে আছে মোহনা।
তাহলে কী মোহনা আমাকে ধাক্কা
দুয়ে নিজে আমার যায়গায়
গুলি নিজের শরিরে বরণ করে
নিলো। নিশাতের মতই মোহনা
যে আমার জীবনের একটা
অংশ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত আম্বুলেস্ন কল
করে মোহনাকে
হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
।
।
চলবে.......