লিখেছেনঃ Md Asif
একদিন কলেজের কৃষ্ণচূড়া
গাছের
নিচে বসে হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস
" তিথির নীল তোয়ালে " পড়ছিলাম
সেই সময় আমার সামনে
কেউ একজন
এসে দাড়ালো। আমি উপড়ের
দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।
কারণ যেখানে
কোনো ছেলে আমার সাথে ঠিক মত
কথা বলে না। আমাকে দেখলে
এড়িয়ে চলে সেখানে একটা মেয়ে কিনা।
ভাবতেই কেমন লাগে।
ও হ্যা মেয়েটার নাম মোহনা।
আমাদের ক্লাসের টপ ছাত্রী, ভদ্র কিন্তু রাগি
এবং আমার জানামতে কারো
সাথেই মোহনার রিলেশন নেই।
তারপর আগত রমণী বলল ---
: আমি কী বসতে পারি।
: জ্বী, বসুন।
: আমার নাম মোহনা। তোমার নামতো সোহেল। ( কেমন মেয়েরে বাবা একেবারে তুমিতে চলে গেলো )
: জ্বী।
: আচ্ছা, তোমাকে সবাই অপমান করে কিন্তু তুমি কিছু বল'না কেন?
: কী বলবো আমি। আমি একটা গরীব ছেলে।
আমি ওদের মতো ধণী পরিবারের সন্তান না।
: তাই কী হয়েছে। এটলিস্ট প্রতিবাদ তো
করতে পারো।
: আমার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই। ওরা তো বাজে ছেলে-মেয়ে
আর ওদের কাজই তো গরীবদের নিয়ে
হাসিঠাট্রা করা। গরীবদেরকে মানুষ বলে
মনে না করা। আর এটা সকল ধণীলোকদের
স্বভাব।
: সবাই কিন্তু এক না। খারাপের ভিতরে অনেক ভালো লোক থাকে কিন্তু
: হ্যা, সেটা ঠিক। একটা কথা কিন্তু আপনি
আমাকে এই কথাগুলো বলছেন কেন?
: আমি কী তোমার সিনিয়র
: না
: তাহলে আমাকে সেই থেকে আপনি
করে বলছো কেন?
: আমার মতো একটা গরীব এবং ক্ষ্যাত
ছেলে আর কিইবা বলতে পারে।
: দেখো নিজেকে কখোনো ছোট ভাববে না।
সবাই তো মানুষ নাকি
: উহু
: আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড ওকে।
আজ থেকে তুমি করে বলবে।
একবারও যেন আপনি বলতে শুনিনা।
এই বলে আমার দিকে হান্ডশেক
করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। আমি
কী করবো তাই ভাবসি। দোটানার
মধ্যে আছি। মেয়েটা তো ভাল। তাহলে ফ্রেন্ডশিপ
করাই যায়। কী বলেন।
: আরে কী হলো। কোথায় হারিয়ে গেলে?( মোহনা)
: ও হ্যা কি বলছিলেন সরি বলছিলে ?
: হান্ডশেক করো। ( এই বলে নিজেই আমার টেনে হান্ডশেক করলো। কখনো এই
অবস্হায় পরিনি তাই কিছুটা নার্ভাস ফিল করতেছি।)।
: চলো, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে এক্ষুণি। ক্লাসে যায়।
: হুম। চলো।
দুজনে একসাথে ক্লাসে গেলাম। সবাই কেমন
অবাক ভাবে আমার দিকে এবং মোহনার
দিকে তাকাচ্ছে। হয়তো ভাবছে '" আমরা যার কাছে পাত্তা পাই না সেই কিনা ক্ষ্যাতের সাথে
হেসেহেসে কথা বলছে। "
বসার সময় ঘটল আরেকটি অবাক কান্ড।
আমি যে বেন্চে বসলাম মোহনা আবার সেই
একই বেন্চে আমার পাশে বসলো।
আবার ও আমি সবার কাছে অবাকের পাত্র
হলাম। প্রায় সবাই আমাদের দিকে কেমন
ভাবে তাকিয়ে আছে। যখন স্যার ক্লাসে আসলো
তখন তিনিও কিছু সময় আমাদের দিকে
তাকিয়ে আছে। আমার কেমন অস্বস্তি লাগছিলো। আমি মোহনাকে বললাম----
: দেখছো সবাই কেমন আমাদের দিকে
তাকিয়ে আছে।?
: তো কি হয়েছে
: দেখো তোমার পাশে আমায় মানাচ্ছে না।
কোথায় তুমি আর কোথায় আমি।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না
" বানরের গলায় মুক্তোর মালা " অনেকটা
এইরকম।
: আমি তোমাকে এইসব বলছি
: না
: তাহলে লোকে যেটা বলে সেটায়
কান দাও কেন?
: আচ্ছা বাবা সরি। এবার একটু হাসো।
তোমাকে গোমড়া মুখে একটু ভালো লাগে
না।
মোহনা ফিক করে হেসে দিলো।
কী সেই হাসি। আহা, মন একেবারে শান্তিতে জুড়িয়ে যায়।
এইভাবেই চলতে লাগলো দিনগুলো। মোহনার
সাথে আমার দিনগুলো কেমন যেন
স্বপ্নের মতো কেটে যাচ্ছে। আমি কখনো
ভাবিনি এইভাবে ক্ষ্যাত অবস্হায় আমার
দিনগুলো এমন কাটবে। আমি ভেবেছিলাম
লান্চনা,বজ্ঞনায় দিনগুলো কাটবে।
যদিও এখনো অপমানিত হই তবে মোহনার
সাথে থাকলে কেউ অপমান, ঠাট্টা করতে
সাহস পাই না। কারণ একদিন একটা
ছেলে আমাকে নিয়ে বন্ধুদের সাথে
হাসাহাসি করছিল। মোহনা কী করলো
জানেন?। মোহনা যেয়ে সেই ছেলেকে
চড় মেরেছিলো সাথে কিছু উপদেশ ফ্রিতে
দিয়েছিলো। আমি ভাবি আমার জন্য শান্তশিষ্ট
মেয়েটা হঠাৎ অগ্নিমূর্তি রুপ ধারণ করলো
কেন। কী জানি আছে কোন কারণ।
এর মধ্যে আমাদের মাসিক পরিক্ষা শুরু হলো।
প্রস্তুতি ভালো ছিলো বিধায় পরিক্ষাও ভালো
হলো।
আজ সেই কাঙ্খিত দিন মানে আজ
রেজাল্ট দিবে। ক্লাসে সবাই বলাবলি করছিল
কে ফাস্ট,সেকেন্ড হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বহু প্রতিক্ষার পর স্যার ক্লাসে আসলেন।
সাথে মার্কশিট। ক্লাসে এসে স্যার বললেন --
: তো বলোতো পরিক্ষায় কে প্রথম স্হান অধিকার করবে?
প্রায় সকলে সমস্বরে বলে উঠল " কে আবার তাসমিন। " স্যার বললেন
: তোমরা একটু ধৈয্য ধারণ করো।
তোমরা ভাবতেও পারবে না ক্লাস পরিক্ষায়
কে প্রথম হয়েছে। ক্লাসে প্রথম হয়েছে.........