লিখেছেনঃ Md Asif
আজ সেই কাঙ্খিত দিন মানে আজ
রেজাল্ট দিবে। ক্লাসে সবাই বলাবলি
করছিল কে ফাস্ট,সেকেন্ড
হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বহু প্রতিক্ষার পর স্যার ক্লাসে আসলেন।
সাথে মার্কশিট। ক্লাসে এসে স্যার বললেন --
: তো বলোতো পরিক্ষায় কে প্রথম স্হান অধিকার করবে?
প্রায় সকলে সমস্বরে বলে উঠল " কে আবার তাসমিন। " স্যার বললেন
: তোমরা একটু ধৈয্য ধারণ করো।
তোমরা ভাবতেও পারবে না ক্লাস পরিক্ষায়
কে প্রথম হয়েছে। ক্লাসে প্রথম হয়েছে
আমাদের মি.ক্ষ্যাত অর্থাৎ সোহেল।
সকলে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে আছে। তারা হয়তো ভাবছে
যে ছেলে কোনোদিন ঠিকমতো স্যারের কাছে
পড়া দেইনি সেই কিনা ক্লাসে ফাস্ট হলো
ভাববার বিষয়।
এমন সময় মোহনা এলো। সে এসে বলল--
: কংগ্রাচুলেশনস সোহেল
: ধন্যবাদ তোমাকে।
: আমি জানতাম তুমি এইরকম একটা
রেজাল্ট করবে।
: কীভাবে জানতে?
: কারণ তুমি যেভাবে পড়ালেখা করতে সেভাবে
করলে যে কেউ ভালো রেজাল্ট করতে
পারবে।
: তাই বুঝি।
: হুম।
ক্লাস শেষ হলো। আমি আর মোহনা
কথা বলতে বলতে বাইরে বের হচ্ছি। সেইসময়
তাসমীন আমাকে আর মোহনাকে উদ্দেশ্য
করে বলল---
: আরে সবাই দ্যাখ, নায়ক নায়িকা বের
হয়েছে।
: এক্কেবারে পার্ফেক্ট জুটি। যাকে বলে
সোনায় সোহাগা ( অন্যজন)
আমরা ওদের কথায় কান না দিয়ে
আমাদের বসার জায়গায় চলে আসলাম।
আর সেটা হলো সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়াতল।
বসতে বসতে মোহনা জিজ্ঞাসা করলো ---
: আচ্ছা সোহেল, তুমি কিন্তু তোমার পরিচয় আমাকে বললে না। ( এই একটা প্রশ্ন ইদানিৎ
খুব করে আমাকে করছে মোহনা। কেন তা জানিনা। কিছু টের পেল নাকি। আমি
অবশ্য এটা যথাসাধ্য এড়িয়ে চলি।)
: চলো লাইব্রেরিতে যাই?
: এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে না।
আমি যখনই
এই একটা প্রশ্ন করি তখনি তুমি
এড়িয়ে যাও। আজকে আমাকে বলতেই
হবে তুমি কে?
: আচ্ছা এটা জানা কী খুব জরুরী?
: হুম।
: শোন তাহলে, আমি যাই হোক না কেন সেটা
তুমি খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে।
এবার খুশি তো
: হুম।
মোহনার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
এই হাসিটা
মনে হয় মনের যাবতীয় ঝামেলা
থেকে মুক্তি
পাওয়ার উপায়। দেহের ভিতরে
একটা প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যায়।
ইদানিৎ মোহনা আমার প্রতি কেয়ারি
হয়ে উঠেছে। আমার ওপর এমনভাবে
কথা বলে যেন আমি আর মোহনা দুজন
প্রেমিক - প্রেমিকা। আমি বুঝতে পারছি
মোহনা আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছে
কিন্তু আমার এইসব ভালো লাগে না।
মোহনা আমাকে আকারে ইঙ্গিতে বুঝাতে
চাচ্ছে তার ভালবাসার কথা। আমি বুঝেও
না বোঝার ভান করে থাকি। যেমন আছি
তেমন ভালো আছি। দরকার কী নিজের
জীবনে অন্যকে জড়ানোর। কিন্তু আমার মন
বড্ড বেশি চাচ্ছে মোহনার ভালবাসায় জড়াতে।
জানি না আর কত দিন থাকতে পারবো।
"কফিহাউজের সেই আড্ডাটা
এখন আর নেই,
এখন আর নেই। " খুব সকালে মোবাইলের
কলার টোনে শান্তির ঘুমটা আমার থেকে
অবসার নিলো। আমি জানি এত সকালে
শুধুমাত্র মোহনা ছাড়া আর কেউ কল দেয় না।
কল ধরলাম ---
: আস্সালামুআলাইকুম ( মোহনা)
: ওয়ালাইকুম আস্সালাম। এত সকালে কল দিছো কেন?
: এত সকাল মানে এখন ৮ টা বাজে।
: তো কী হয়েছে।
: তুমি আজকে একটু তাড়াতাড়ি
আসতে পারবা?
: কেন গো?
: তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার?
: আচ্ছা আসবো। এখন রাখি। বাই
: বাই।
আমি বুঝতে পারছি মোহনা আজকে
আমাকে কী কথা বলবে। হয়তো মোহনা
আমাকে আজ প্রপোজ করবে। হাইরে
কপাল, আমি জানতাম মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। কিন্তু আমার কী কপাল।
কথা বলতে বলতে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
ব্রেকফাস্ট করতে যেয়ে দেখি আব্বু টেবিলে নাস্তা করতেছে। আমিও বসে পড়লাম।
: আব্বু কখন আসলে?
: এইতো রাত্রে আসসি। কেমন আছিস বাবা?
: আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছে?
: এইতো ভালো আছি। এইভাবে আর কতদিন?
বুঝতে পারলাম আব্বু আমার গেটাপের কথা
বলছে।
: এইতো আর কিছুদিন।
: আমার কী টাকার অভাব যে তুই এইভাবে
চলাফেরা করিস।
: আব্বু সেটা না। আমার সাধারণ ভাবে
চলতে ভাল লাগে। আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে পাল্টে ফেলবো।
ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে
বের হলাম। মোহনার বর্ণিত পুকুরপাড়ে
যেয়ে দেখি মোহনা আজকে খুব সুন্দরভাবে
সেজেকে। একেবারে পরির মতো লাগছে।
: এহেম এহেম। ( কাশি দিলাম)
: তাহলে আছসো তুমি।
: না আসলে কী আর কোনো উপায় আছে।
: তোমাকে আমার কেমন লাগে ?
: হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করছো?
: তুমি তো জানো আমি কারোর সাথে প্রেম করি
না কিন্তু একজনকে আমার খুব ভালো লাগে। মানে আমি তাকে ভালবাসি।
: কে সে সৌভাগ্যবান?
: সে আর কেউ না। সে হলো...