Type Here to Get Search Results !

ভালোবাসা দিবি কিনা বল (পার্টঃ৯)

 লিখেছেনঃ Md Asif


অপরদিকে নিশাতের অপারেশনের

দিন ঘনিয়ে আসছে। সে একটিবারের জন্য সোহেলকে
দেখতে যায়, কিন্তু দেখে
তাদের বাড়ি শুন্য পড়ে আছে।
বিমর্ষ হৃদয় নিয়ে সে
বাড়ি ফিরে আছে এবং
আব্বুর কাছ থেকে জানতে
পারে সোহেলের আব্বুর
বদলি হয়ে গেছে।
নিশাত ভাবে শেষ দেখাটাও
হলো না। ( একটা দীর্ঘনিশ্বাস
বেড়িয়ে আছে অনেক কষ্ট
আর বেদনার সাক্ষী হয়ে)
আজকে নিশাতের অপারেশন
কিন্তু নিশাতের মনের ভিতরে
কাল বৈশাখীর ঝড় বইছে।
সে মৃত্যুর আগে মাত্র
একটিবার সোহেলকে
দেখতে চেয়েছিলো
কিন্তু সেটাও তার কপালে নাই।
অপারেশনের সময় হয়ে গেছে।
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ
করে নিশাত।
প্রথমে নিশাতকে চেতনা
নাশক ইনজেকশন দিয়ে
অঙ্গান করা হয়।
তারপর অপারেশন চলতে থাকে।
অপারেশন চলতে ২ ঘন্টা ধরে।
মহান আল্লাহ তায়ালার
অশেষ রহমতে বেচে যায় নিশাত।
বাড়ির সকলে আল্লাহর
শুকরিয়া আদায় করে।
কেননা বিপদে পড়লে
একমাত্র আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। আল্লাহ
তায়ালাই
আমাদের কে রক্ষা করেন।
অপারেশন হয়ে যাওয়ার কিছুদিন
পর নিশাতকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোপুরি সুস্হ
হতে তার মাস
খানেক সময় লাগে।
কিন্তু এখন আর সেই
আগের প্রাণোচ্ছল, সদা হাসিখুশি
নিশাত নেই। সবসময় মন
মরা হয়ে থাকে। নিজেকে
আড়াল করে রাখে সবার থেকে।
কারণ তার সোহেল তো
আর তার জীবনে নেই।
সোহেল কে খোজার চেষ্টা করে নিশাত।
কল দেয় সোহেলের নাম্বারে কিন্তু
সেটা সবসময় বন্ধ থাকে।
কিন্তু কেমনে পাবে।
তার ঠিকানা তো জানে না।
নিশাত খুজতে লাগুক সোহেলকে।
ততক্ষণে আমরা সোহেলের ঘটনায় আসি। **************::
সুস্হ হওয়ার পরও
সোহেল আগের মতো
একা একা একা থাকতো।
সোহেলের অবস্হা দেখে
সোহেলের পরিবারও কষ্ট পায়।
সোহেল নিজের পরিবারের
কষ্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেকে
পাল্টে ফেলার।
নিজেই নিজের মনকে
এই বলে বোঝায় যে, আমি কেনো একটা বিশ্বাসঘাতকের
জন্য
নিজের পরিবারকে কষ্ট দেবো
আর নিজে কষ্ট পাবো।
তাই নিজের অতিতকে
ভোলার চেষ্টা করে সোহেল।
সে যথাসম্ভব মেয়েদের থেকে
দুরে থাকার চেষ্টা করে কারণ
মেয়েদেরকে দেখলে তার
নিশাতের কথা স্বরণে চলে আছে।
তাই সেদিন থেকে নিজের
পরিচয় গোপন করে আর
ক্ষ্যাতের মতো চলাফেরা করে।
সোহেলের অতিত ঘটনা তো শুনলেন।
এবার বর্তমানে আসি।
আমার অতীতের ঘটনা
বলা শেষে পাশে তাকিয়ে
দেখি মোহনা নিরব হয়ে কাদছে।
: একি তুমি কাঁদছো কেন?
: এই বয়সে তুমি এত বড়
ধাক্কা খেয়েছো, এত কষ্ট পেয়েছো
অথচ কাউকে বুঝতে দাওনা।
সবসময় হাসিখুশি থাকো।
: আসলে আমি নিজের
কষ্ট নিজের মধ্যে জমা
করে রাখতে শিখে গেছি তাই
: তুমি কি জানো না কষ্ট
শেয়ার করতে হয়?
: জানি কিন্তু কাকে বলতাম আমি।
বলার মতো কেউ যে ছিলো না।
: আমাকে তুমি একবার
সুযোগ দিয়ে দেখো
আমি আমার ভালবাসা
দিয়ে তোমার সকল কষ্ট
দুর করে দিবো। ট্রাস্ট করে দেখো একবার। ( হাত ধরে
বললো)
আমার আর কিছু বলার নেই।
আমার যে এখন একজোড়া
বিস্রস্ত হাত দরকার যেটা
ধরে আমি আমার জীবন নদীটা
পার করতে পারবো। আমিও শক্ত করে ওর হাতটা ধরে
বুঝিয়ে দিলাম ওকে কতটা দরকার আমার। ওর চোখের
মুল্যবান
পানি আলতো করে মুছে দিলাম।
: শোনো একটা কথা, আজ
থেকে ভালো ভাবে চলবে।
আর হ্যা, কোনো মেয়ের দিকে
একদম তাকাবে না।
তাকালে কিন্তু চোখ তুলে নেবো।
: বাব্বাআ, প্রথম দিনেই এত শাসন।
না জানি পরবর্তীতে আমার
কী অবস্হা হবে।
: এখন থেকে এমন হবে।
: জ্বী,হুকুম মহারাণী।
এবার নিজেকে পাল্টানোর
সময় চলে এলো।
এই জীবনটা আমার আর
ভালো লাগে না এখন।
যদিও আগে ভালো লাগতো।
বাড়ি চলে আসলাম।
দুপুরে খাওয়ার টেবিলে গেলাম।
সবাই আছে। আব্বুকে বললাম -----
: আমার কিছু টাকা লাগবে আব্বু।
: কী করবি বাবা?
: এখন সময় এসেছে নিজেকে পাল্টাবার
: সত্যি বলছিস বাবা।
: হুম
: এই নে ক্রেডিট কার্ড।
: এটা কী করবো। এত লাগবে না
: নাহ, তুই রাখ বাবা। তোর যত লাগে তত খরচ করিস।
আমার কাছে তো কিছুই চাসনি তুই। দিলেই নিস না
: আচ্ছা।
তারপর খেয়ে আমি মার্কেটে গেলাম।
কোনো স্টাইলিশ জামা কাপড়
পড়ি না এইজন্য সবকিছু কিনতে হবে।
সবকিছু কিনলাম।
তারপর ঘড়ির শো রুমে
যেয়ে লেটেস্ট ঘড়ি কিনলাম এবং
লেটেস্ট স্টাইলে নিজের চুল কাটলাম ।
সবকিছু কেনা শেষ তাই
বাড়ি চলে আসলাম।
তারপর খেয়েদেয়ে এক ঘুমে সকাল।
ভাবি ডেকে তুললো।
ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম।
ভাইয়া বলল----
: সোহেল?
: জ্বী, ভাইয়া
: কলেজে যাওয়ার সময় আমার বাইকটা নিয়ে যাস।
: কেন ভাইয়া?
: নতুন লুকে যাচ্চিস, বাইক না হলে কী হয়। মেয়েরা পছন্দ
করবে না ( মুচকি হেসে)
: আরেহ, আমার দেবর একদম হিরোর মতো। মেয়েরা একদম
ফিদা হয়ে যাবে ( ভাবি)
: আরে তোমরা কী শুরু করলে ( আমি)
: আমরা তো সত্যি কথা বলছি ( ভাইয়া এবং ভাবি)
: আচ্ছা ভাবি ঠিক আছে। আমি বাইক নিয়ে যাবো
ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে
কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
অবশ্য বাইক নিয়েছি সাথে।
কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ
করার সময় লক্ষ্য করলাম
সবাই আমার দিকে অবাক
বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।
তাকানোরই কথা।
কলেজের ক্ষ্যাত যে
আজকে হিরোর লুকে আসছে।
দামি শার্ট, জিস্ন, কেডস। চোখে সানগ্লাস, লেটেস্ট
হেয়ার কাটিং।
অবাক হবে না ছাড়া কী।
তাসনিম ও তার বান্ধবীর দল
মনে হয় সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে।
কারণ তাসনীমের মুখটা হা হয়ে গিয়েছে আমাকে এই
লুকে দেখে ।
আমার অবশ্য ভালোই লাগছে।
বাইক গ্যারেজে রেখে ক্লাসের
উদ্দেশ্য হাটতে লাগলাম।
আজকে দেখলাম সবাই
আমার সাথে কথা বলছে।
এমনকি কয়েকটা মেয়ে
ফ্রেন্ডশিপ করে গেলো আমার সাথে।
বলতে গেলে ক্লাসের
মধ্যমনি হয়ে গেলাম।
মোহনা কে একটু রাগিয়ে দি।
রাগলে ওকে আরো কিউট
আর সুন্দর লাগে।
তাসনীমের কয়েকটা
বান্ধবী আসলো আমার
কাছে যারা আমাকে রোজ
অপমান করতো ক্ষ্যাত
বলে অথচ আজকে আমাকে
সুন্দর,স্মার্ট বলে প্রশংসা করছে ।
একেবারে গিরগিটির স্বভাব।
তবুও আমি মোহনাকে
রাগানোর জন্য ওদের
সাথে হেসেহেসে কথা
বলতে লাগলাম।
আড়চোখে তাকিয়ে দেখি
মোহনার সুন্দর মুখটা রাগে
লাল হয়ে গেছে।
স্যার ক্লাস
করিয়ে গেলেন।
মোহনা বাইরে চলে গেলো।
একটা কথা বললো না
আমার সাথে।
বুঝলাম ভালোই রেগে আছে।
যায় অভিমান ভাঙ্গিয়ে আসি।
বাইরে এসে দেখি মোহনা
মন খারাপ করে বসে আছে
আমাদের প্রিয় জায়গায়
অর্থাৎ সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে।
একেবারে গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
আমি যেয়ে ওর পাশে বসলাম
আর মোহনা অন্য পাশে
ঘুুরে বসলো।
আমি ওকে আমার কাধ
দিয়ে ওর কাধে ধাক্কা দিলাম।
মোহনা রাগি চোখে আমার
দিকে তাকালো। আমি আহ্লাদী সুরে বললাম-----
: কী হয়েছে বাবু?
: কীসের বাবু হুম।
: তুমি আমার বাবু না?
: আমি কারো বাবু না। তার তো অন্য কেউ আছে।
: আমি তো এমনি কথা বলছিলাম।
: আমি কিছু জানিনা।
: তাহলে আমি যায়।
: কোথায় যাবে?
: আমার বাবুকে খুজতে।
: পা কিন্তু ভেঙ্গে দিবো
: তাহলে তো লোকে তোমাকে
খোড়ার গার্লফ্রেন্ড বলবে। হিহিহি।
: হাসসে দেখো, একেবারে বান্দরের মতো।
এই কথা শুনে আমি
হাসি বন্ধ করে দিলাম।
আমি একটু অভিমান করে
দেখি মোহনা কী করে।
আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলাম।
মোহনা বলল-----
: আমার বাবুটা কী রাগ করেছে?
:................ ( চুপ)
: কী হলো কথা বলছো না কেন?
:...........( চুপ)
: তুমি কথা না বললে কিন্তু আমি কেঁদে দেবো
:......... ( চুপ)
এইবার সত্যি সত্যি কেঁদে দিলো।
হাইরে আমি তো মজা করছিলাম।
আর মোহনা কীনা সত্যি সত্যি কেঁদে দিলো।
: আরে কাঁদছো কেন? ( আমি)
:.................( চুপ)
: কেঁদোনা লক্ষিটি।
:............ ( চুপ)
: তুমি কাদলে আমার কষ্ট হয়।
তুমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছো।
এইবার মোহনা কান্না থামালো।
তারপর বলল.......
চলবে...........

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.